আমেরিকার কোভিড
মোকাবিলা
-শুভাশিস ঘোষাল
গত দেড় বছর
ধরে সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন আলোচনার সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল কোভিড অতিমারি ও তার ফলে হওয়া
অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও মানবিক সংকট। পৃথিবীতে সাম্প্রতিককালে অনেক মারাত্মক শ্বাসবাহিত
রোগ দেখা দিয়েছে, যেমন সার্স, মার্স, ইবোলা আর এইচ-ওয়ান-এন-ওয়ান, কিন্তু স্প্যানিশ
ফ্লু অতিমারির পর গত একশ বছরে কোভিডের মতো এরকম সাংঘাতিকভাবে আর কোনও রোগ সারা পৃথিবীতে
ছড়িয়ে পড়েনি। কোভিডে সব দেশই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, ভারতবর্ষে প্রথম লকডাউনের সময় আমরা
সমাজের নিচুতলার মানুষের অবর্ণনীয় দুর্দশা দেখেছি, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ভারতের
স্বাস্থ্যব্যবস্থাও প্রায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা গিয়েছিল, তবে আমেরিকার কোভিড পরিস্থিতির
বিবর্তন বিশেষভাবে কৌতুহল জাগায়। অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিকাঠামো বেশ উন্নত
হওয়া সত্ত্বেও কোভিডে সবথেকে বেশি বিপর্যয়ে পড়া দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা অন্যতম
--- সরকারি হিসেবে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ও
মৃতের সংখ্যায় সবার থেকে বেশি। এক্ষেত্রে অবশ্য উল্লেখ্য যে বিভিন্ন দেশের সরকারিভাবে
দেওয়া কোভিডে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যায় অনেক গণনার ত্রুটি রয়েছে। অনুমান করা যায় অনেক
দেশে পরিকাঠামোয় ঘাটতি বা অন্যান্য কারণে এই সংখ্যাগুলো কম দেখাচ্ছে --- আসলে সংখ্যাগুলো অনেক বেশি হবে। আর শিল্পোন্নত দেশে
বয়স্ক মানুষের আধিক্যের জন্য উন্নত পরিকাঠামো সত্ত্বেও তারা বেশি সমস্যায় পড়েছে, কারণ
কোভিড বয়স্কদের অনেক বেশি ক্ষতি করে। তবে যাই হোক, আমেরিকা যে সাঙ্ঘাতিক কোভিড সংকটে
পড়েছিল, সেটা পরিষ্কার। গত বছরের শেষ দিকে একরকম মৃত্যুর মিছিল চলছিল দিনে তিন-চার
হাজারের উপর, আক্রান্তও হচ্ছিল প্রতিদিন দুই থেকে তিন লক্ষ লোক। এখন সেই সংখ্যাগুলো
নব্বই-পচানব্বই শতাংশ কমে গেছে। সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল না হলেও একথা অবশ্যই বলা যায়
যে সেই সাংঘাতিক পরিস্থিতির থেকে আমেরিকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতিতে
রীতিমতো জোয়ার চলছে। এর অন্যতম কারণগুলো হল টিকাকরণের সাফল্য, অর্থনীতিতে টাকার যোগান
বাড়ানো --- বিশেষ করে সাধারণ মানুষের হাতে সরাসরি স্টিমুলাস চেক দেওয়া ও কাজ-হারানোদের
বেকারভাতা যোগানো। এবং অবশ্যই দেশের শীর্ষনেতৃত্বে রদবদল, ও নতুন প্রশাসনের নেওয়া কিছু
নীতির সুফল। আমেরিকার অর্থনীতির সঙ্গে সারা পৃথিবীর অর্থনীতি বিশেষভাবে সম্পর্কিত
--- ১৯২৯ এবং ২০০৮ এর মহামন্দা সারা পৃথিবীর
অর্থনীতিকেই পঙ্গু করে দিয়েছিল। সেরকম মহামন্দা হবার সমূহ সম্ভাবনা ছিল এবারেও, যা
এড়াতে পারাটা একটা উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এই নিবন্ধে আমেরিকার সরকারের পক্ষ থেকে কোভিড
মোকাবিলায় কি কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আর তার ফলে কি কি সাফল্য এসেছে, সেগুলো কিছুটা
আলোচনা করা হচ্ছে।
আমেরিকায় কোভিড
রুগী প্রথম (বিদেশ থেকে আসা লোকেদের বাদ দিয়ে) পাওয়া গিয়েছিল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির
শেষে, যদিও পরোক্ষ প্রমাণ থেকে অনুমান করা যায় যে ২০১৯ সালের শেষের দিকেই হয়তো সংক্রমণ
শুরু হয়েছে চীন এবং ইউরোপ থেকে আসা পর্যটকদের মাধ্যমে। ততদিনে ভাইরাসের উৎস ইউহানে
লকডাউন হয় গেছে, চীন থেকে অন্যান্য দেশে যাতায়াতও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। আমেরিকাও ফেব্রুয়ারির
২ তারিখে চীন থেকে আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে ও তার পরদিন দেশে জনস্বাস্থ্যসংকট ঘোষণা
করে। এর তিনদিন আগে অবশ্য বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা হু পৃথিবীব্যপী জনস্বাস্থ্যসংকট ঘোষণা
করেছে। মানুষ থেকে মানুষে কোভিড ছড়ায় তারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। মার্চের মাঝামাঝি হু
কোভিডকে অতিমারি বলে অভিহিত করে আর ট্রাম্পের প্রশাসন জাতীয় সংকট ঘোষণা করে। এর ফলে
প্রশাসন কোভিড মোকাবিলায় জরুরি তহবিল থেকে খরচ করার অধিকার পায়। ইউরোপ থেকে যাতায়াতেও
নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। সেই অবস্থায় মাত্র পনেরটি জানা কোভিড সংক্রমণ ছিল সারা দেশে। ট্রাম্প
ঘোষণা করেন শিগগিরি সংক্রমণের সংখ্যা শূণ্যে নেমে আসবে। বলা বাহুল্য, তা হয় নি। কোভিড
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। মার্চের মাঝামাঝি মৃতের সংখ্যা একশ পৌঁছে যায়। ক্যালিফোর্নিয়ায়
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়িতে থাকতে বলা হয় সাধারণ মানুষকে। অন্যান্য রাজ্যেও বেশ কিছু
ব্যবসা বন্ধ করতে হয়, স্কুল-কলেজ অনলাইনে পড়ানো শুরু করে, জরুরি পরিষেবা ছাড়া বেশিরভাগ
চাকরিতে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়। বহু মানুষ, বিশেষ করে যারা ঘন্টাপ্রতি কাজের হিসেবে
পারিশ্রমিক পান, তাদের অনেকে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন। বিমান ও হোটেল পরিষেবা নেবার
লোক ভীষণভাবে কমে যায়, পর্যটন কার্যতঃ থমকে যায়, অর্থনীতিতে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসে।
বেকারত্বের হার চার শতাংশের কম থেকে প্রায় পনের শতাংশে পৌঁছায়, যা কি না গত দশকের মহামন্দার
সময়ের থেকেও অনেক বেশি। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির বদলে অর্থনীতিতে সংকোচন হয় --- ২০২০ এর
প্রথম ত্রৈমাসিক পর্যায়ে পাঁচ শতাংশ ও দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক
পর্যায়ে তিরিশ শতাংশেরও বেশি। শেয়ার বাজারে ডাউ-জোন্স সূচক মাঝ-ফেব্রুয়ারি থেকে মাঝ-মার্চের
মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মূল্য হারিয়ে ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্বের তিন বছরের বৃদ্ধির পুরোটাই খোয়ায়। এমনকি অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে বাজারে
এতটাই হতাশা দেখা দেয় যে আমেরিকান ক্রুড অয়েল শর্ট-টার্ম ফিউচার ব্যারেলপিছু শূণ্য
ডলারের নিচে নেমে গিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করে (এর মানে অবশ্য এই নয় যে পেট্রল-পাম্পে গিয়ে
গাড়িতে তেল ভরলে পয়সা পাওয়া যেত)।
এদিকে মৃতের
সংখ্যা হুহু করতে বাড়তে থাকে। নিউ ইয়র্ক শহরে হাসপাতালগুলোর উপর এমন চাপ সৃষ্টি হয়
যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। সেই সময় সম্পূর্ণ নতুন রোগ কোভিডের
চিকিৎসা সম্পর্কে ডাক্তারদেরও বিশেষ কিছু জানা ছিল না। ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন
বা কিছু ককটেল ড্রাগ আন্দাজের ভিত্তিতে প্রয়োগ করা হচ্ছিল হৃদরোগের ঝুঁকি থাকা এবং
বিশেষ সাফল্য না পাওয়া সত্ত্বেও। মে মাসে রেমডেসিভির কোভিড চিকিৎসায় প্রয়োগের অনুমোদন
দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে আংশিক লকডাউন, কিছুটা সচেতনতা বৃদ্ধি, ডাক্তারদের কোভিড চিকিৎসায়
অভিজ্ঞতা বাড়া এবং রেমেডেসিভিরে অনেকটা কাজ দেওয়ায় দিনপ্রতি মৃতের সংখ্যা অনেকটা নেমে
আসে। ব্যবসা-বাণিজ্যও অনেকটাই খুলে দেওয়া হয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে। তবে দিনপ্রতি
আক্রান্তের সংখ্যা কমে না। জুন মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা কুড়ি লক্ষ অতিক্রম করে। তবে
কোভিড টেস্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আগে যেসব কোভিড আক্রান্ত অসনাক্ত থেকে
যাচ্ছিল, তাদের বেশিরভাগই নথিভুক্ত হতে থাকে। প্রতিষেধক টিকা তৈরির উদ্দেশ্যে ফাইজার,
মোডের্না, অ্যাস্ট্রোজেনিকা ইত্যাদি ওষুধ কোম্পানি তাদের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করে।
অনুমান করা হয় অক্টোবরেই প্রথম ডোজ পাওয়া যেতে পারে।
মার্চের শেষাশেষি
ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকান জনপ্রতিনিধিরা একযোগে মার্কিন আইনসভায় করোনাভাইরাস এইড রিলিফ
অ্যান্ড ইকনমিক সিকিউরিটি (কেয়ার্স) অ্যাক্ট অনুমোদন করেন, যা রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের
সইয়ের পর আইনে পরিণত হয়। দুলক্ষ কোটি ডলারের এই সরকারি উদ্যোগ ঐতিহাসিকভাবে পৃথিবীর
বৃহত্তম অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা। এতে রাজ্য ও স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয়
পরিষেবা চালু রাখার জন্য অনুদান পাঠানো হয় ও ছোট-বড় ব্যক্তিগত ব্যবসাকে ঋণ ও অনুদান
দেওয়া হয়। এয়ারলাইনগুলি বা ওই ধরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া
হয় এবং হাসপাতালগুলিকে কোভিড মোকাবিলার জন্য অর্থ জোগানো হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও
বাড়তি মূলধন জুগিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসাকে ঋণ দিতে উৎসাহ দেওয়া হয় --- রাষ্ট্র সেইসব ঋণের
গ্যারান্টার থাকে, ফলে ব্যাংকের টাকা মার যাবার ভয় থাকে না। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক
ফেডেরাল রিজার্ভও সুদের হার এক ধাক্কায় দেড় শতাংশ কমিয়ে প্রায় শূণ্যের কাছে নিয়ে আসে।
কর্মহীনদের ভাতা দেওয়ার পরিসর বাড়ানো হয়। তা ছাড়া নাগরিকদের সরাসরি আর্থিক সাহায্য
পাঠানো হয় যাতে তারা সেই টাকা বাড়িভাড়া ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় খরচ সামাল দিতে পারে বা
কোনও অনাবশ্যকীয় কারণে ব্যয় করে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পারে। অর্থনীতির ভাষায় একে আর্থিক
উত্তেজক বা স্টিমুলাস বলে। মন্দার সময় যাদের কাজ টিকে আছে আর আয়ও মোটামুটি ঠিক আছে,
তারাও ভবিষ্যতের আশংকায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বা পরিষেবা ছাড়া অন্য কিছু চট করে কিনতে
চায় না, অপেক্ষা করে। ফলে দেশের অর্থনীতির মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে সময়ও বেশি লাগে।
সরকার এভাবে মানুষের হাতে সরাসরি টাকা দিয়ে বাজারে টাকার যোগান বাড়ালে তা অর্থনীতিতে
সক্রিয়তা বাড়ায়। বিশেষ করে সুদের হার কম থাকলে মানুষের টাকা জমিয়ে রাখার প্রবণতা কম
থাকে। এই ধরণের সরকারি উদ্যোগ নেওয়ায়, জনজীবন কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আর প্রতিষেধক
টিকা সফল হবে এই আশার ফলে বাজার শিগগিরি ঘুরে দাঁড়ায়। ডাউ-জোন্স সূচক দ্রুত হৃত অবস্থা
পুনরুদ্ধার করে বর্তমানে সর্বনিম্ন মানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। রেকর্ড হারে
কর্মহীনতার পর মাত্র এক মাসের মধ্যেই বেকারত্বের হার ছয় শতাংশের নিচে নেমে আসে। ২০২০
এর তৃতীয় ত্রৈমাসিক পর্যায়ে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার পৌঁছায় তিরিশ শতাংশে। যেরকম মহামন্দা
হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, তা এড়িয়ে অর্থনীতি এত তাড়াতাড়ি চাঙ্গা হওয়াটা একটা বিরাট
সাফল্য। এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় যে এশিয়া বা ইউরোপের বহু দেশ যে অর্থে সামগ্রিক লকডাউন
করেছে, আমেরিকা সেই অর্থে তেমন কিছু করেনি। শুরুতে কিছু নিয়ন্ত্রণ চালু থাকলেও তার
পরে দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরা, পরিবহন প্রায় স্বাভাবিকভাবে চলেছে। সাধারণ মানুষের রাস্তায়
বেরোনোর নিষেধাজ্ঞা কখনই ছিল না। তবে রাজনৈতিক অঙ্ক সবক্ষেত্রেই নীতি নির্ধারণে বড়
ভূমিকা নেয়। রিপাবলিকান দল প্রায় কোনওরকম নিয়ন্ত্রণই চাপাতে অস্বীকার করে --- শুরুতে
বিশেষ ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও স্কুল-কলেজ সহ সমস্ত প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে খোলা রাখতে
চাপ দেয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে। কারণ ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের অন্যতম ভোটিং ব্লক। অর্থনীতির
প্রশ্নে রিপাবলিকানরা নিজেদের ‘ফিসকালি কনসারভেটিভ’ বলে --- তারা অর্থনীতিতে সরকারি
হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ও করের হার যৎসামান্য রাখার পক্ষ্যে। ওবামার রাষ্ট্রপতিত্বে মহামন্দার
সময় তারা সরকারি উদ্যোগে প্রবলভাবে বাধা দিয়েছিল এই বলে যে এতে দেশের ঋণের বোঝা অতিরিক্ত
হয়ে গিয়ে ভবিষ্যতে বিরাট চাপ সৃষ্টি করবে। লক্ষ্য করার বিষয় রিপাবলিকানরা গতবছর সরকারি
স্টিমুলাসকে সমর্থন করে, কারণ তখন রিপাবলিকান দলের রাষ্ট্রপতি আর সেই বছরেই ভোট। তবে
কেয়ার্স অ্যাক্ট থেকে পাওয়া সাহায্য সব সময় সঠিক জায়গায় পৌঁছায় নি --- ছোট ব্যবসার
টাকা বড়ো কর্পোরেট হাউস হাতিয়ে নিয়েছে লবি করে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে দুলক্ষ কোটি ডলারের মতো সুবিশাল
আর্থিক প্যাকেজ, যা আমেরিকার মতো বৃহৎ অর্থনীতির পক্ষেও অনেক, প্রকৃতপক্ষে অর্থায়িত
হয় রাষ্ট্রীয় ঋণের মাধ্যমে। এই ঋণ মূলতঃ আসে ট্রেজারি বন্ড বিক্রি থেকে --- বিনিয়োগকারীরা
সেই বন্ড কিনে তার বদলে আমেরিকান ট্রেজারির কাছ থেকে সুদ পায়। দেশের উৎপাদনশীলতার সাপেক্ষে
ঋণের পরিমান বাড়লে অর্থনীতির নিয়মে ঝুঁকি বেড়ে সুদের হার (যাকে ট্রেজারি ইল্ড বলে)
বেড়ে যাবার কথা --- না হলে বিনিয়োগকারীরা সেই বন্ড কিনতে উৎসাহী হবে কেন? সেরকম হলে
ঋণ শোধ করার চাপ অনেক বেড়ে যায়। সাম্প্রতিককালে গ্রীস বা আরও বেশ কিছু দেশে রাষ্ট্রীয়
ঋণ অত্যধিক হয়ে যাবার ফলে এরকম সংকট দেখা দিয়েছিল। তবে আমেরিকার ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা
নিয়ে বিনিয়োগকারীরা এতটাই নিশ্চিত যে ট্রেজারি ইল্ড বাড়ে না, টাকার জোগানের ফলে বাড়তি
উৎপাদনশীলতা এই ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারবে বাজার এমন বিশ্বাস করে। বরং শেয়ারে লগ্নি করা
সেই অবস্থায় ঝুঁকির বলে তুলনায় অনেক কম ঝুঁকির আমেরিকার ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ বাড়ে।
ফলে ইল্ড কমে যায়, মার্কিন অর্থনীতিতে কোনও বড় সংকট হয় না।
তবে অর্থনীতি
রক্ষা পেলেও দেশের স্বাস্থ্যসংকটের সুরাহা হয় না। অক্টোবর থেকে হুহু করে দৈনিক আক্রান্ত
ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে যথাক্রমে সর্বোচ্চ তিন লক্ষ ও চার হাজারের উপর পৌঁছায়।
ট্রাম্পের প্রশাসন কোভিড মোকাবিলায় চুড়ান্ত
অপদার্থতার পরিচয় দেয় শুধু নয়, ট্রাম্প ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের
দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনোভাবও প্রকট হয়ে যায়। যেহেতু ২০২০ সাল নির্বাচনের
বছর, ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের মূল লক্ষ্য দাঁড়ায় কোভিড সমস্যাকে লঘু করে দেখিয়ে ভোটে
উৎরানো। বিশেষজ্ঞদের মতামত না মেনে ঝুঁকি সত্ত্বেও যেনতেনপ্রকারেণ সমস্ত ক্রিয়াকলাপ
স্বাভাবিকভাবে চালু রাখার জন্য জোরাজুরি করা হয় ও নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্প
সমর্থকদের উস্কানি দেওয়া হয় বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করতে, মাস্ক পরার মতো সাধারণ সুরক্ষাবিধি
পালনেও অনাগ্রহ দেখাতে। দেশের প্রধান ছোঁয়াচে রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর ফাউচিকে প্রাণে মারার
হুমকিও দেওয়া হয়। মিথ্যে আশ্বাস দেওয়া, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন
কোভিড প্রতিকারে ব্যর্থ জানার পরও সেটা প্রতিষেধক হিসেবে দাবি করা ছাড়াও ট্রাম্প হাসির
খোরাক হন জীবানুনাশককে শরীরে ইনজেকশন দেবার কথা বলে। পরে দেখা গেছে কোভিড বায়ুবাহিত
রোগ এবং তার অতিমারির হবার ক্ষমতা আছে, বিশেষজ্ঞদের কাছে জানুয়ারিতেই এরকম জেনেও ট্রাম্প
প্রায় দুমাস ব্যবস্থা নিতে দেরি করে দেশকে সাংঘাতিক সংকটের দিকে ঠেলে দেন। এমনকি প্রকাশ্য
সভায় ট্রাম্প একথা কবুল করেন যে তিনি কোভিড টেস্ট বন্ধ করতে বলছিলেন, কারণ এতে আক্রান্তের
সংখ্যা প্রকাশ পাচ্ছে, আর তাতে ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। পরে ট্রাম্পের আরও
অমানবিক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। দেশে যখন আক্রান্তের সংখ্যা পনের, তখন মার্কিন নাগরিকভর্তি
সমুদ্রে ক্রুজে যাওয়া একটা জাহাজ ট্রাম্প বন্দরে ভেড়ার অনুমোদন দেন না তাতে কয়েকজন
কোভিড রুগী আছে বলে। সেটা দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখার জন্য নয়, তাতে কোভিড আক্রান্তের
সংখ্যা বেশি দেখাবে বলে। এমনকি আমেরিকায় যারা কোভিড আক্রান্ত হবে তাদের কিউবার মাটিতে
আমেরিকার মালিকানায় থাকা গুয়ান্টানামো বে আটক কেন্দ্রে (যা কিনা সন্ত্রাসবাদীদের আটক
করতে ব্যবহার হয়) পাঠানো যায় কিনা ট্রাম্প খোঁজ করেন, যাতে দেশের মাটিতে কোভিড আক্রান্তের
সংখ্যা খাতায়-কলমে কম করে দেখানো যায়। ভোটের প্রচারের সময় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না মেনে
বড় জনসভা করেন, যা থেকে কোভিড ছড়ায় অনেক। ট্রাম্পের বিশেষ ইচ্ছে ছিল শার্লট শহরে রিপাবলিকান
দলের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতিপদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নেবার সময় বড় করে জমায়েত করতে,
কিন্তু নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর তাতে অনুমতি না দেওয়ায় ট্রাম্প ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
পরে অবশ্য পরিস্থিতি মেনে অধিবেশন ভার্চুয়ালই করতে হয়। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সুরক্ষা
না মেনে বিরাট জমায়েত করেন এবং নিজেও কোভিড আক্রান্ত হন। হাসপাতালে গিয়ে প্লেটলেট চিকিৎসার
মাধ্যমে সুস্থ হন ঠিকই, তবে ট্রাম্পের রোগ বেশ জটিল পর্যায়ে ছিল। ফিরে এসেই তিনি বলেন
তিনি কোভিড যুদ্ধ জয় করে এসেছেন। সাধারণ আমেরিকানদের কোভিডে ভয় না পেয়ে জমায়েত করতে
উৎসাহ দেন এই বলে যে কোভিডে চিকিৎসায় সহজেই নিরাময় হয়। প্লেটলেট চিকিৎসার মতো পরীক্ষামূলক,
জটিল, ব্যয়বহুল পদ্ধতি, যা রাষ্ট্রপতি বলে ট্রাম্পের কাছে সহজলভ্য, বলা বাহুল্য তা
সাধারণ আমেরিকানদের আয়ত্তাধীন নয়। নির্বাচনের আগে টিকা দেবার কৃতিত্ব অর্জন করে ভোট
পেতে সুবিধা হবে বলে পদ্ধতি সম্পূর্ণ হবার আগেই টিকা অনুমোদন করার জন্য ট্রাম্প জোরাজুরি
করেছেন। অবশ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাতে সায় দেন নি, নিয়ম অনুযায়ীই চলেছেন। ভোটগ্রহণ
ডাকযোগে করার ব্যবস্থাতেও ট্রাম্প নানাভাবে বাধা দেবার চেষ্টা করেন। পরে ফলাফল বেরোবার
পর হেরে গেছেন দেখে ফলাফল মানতে অস্বীকার করেন। এর পরিণতি ৬ই জানুয়ারী আইনসভার উপর
ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা, যা আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কিত ঘটনা হয়ে থাকবে। ভোট
মেটার পর ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে যে আড়াই মাস
ট্রাম্প ক্ষমতায় ছিলেন, সেই সময়েও পরবর্তী বাইডেন-প্রশাসনের জন্য যতটা সম্ভব অসুবিধা
সৃষ্টি করে গেছেন। কোভিড টিকা জোগাড় ও প্রদান করার ব্যাপারেও গড়িমসি করেছেন, ডেমোক্র্যাটশাসিত
বা যেসব রাজ্য ট্রাম্পকে ভোট দেয় নি, তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক ব্যবহার করেছেন। বেশ
কিছু টিকার হদিস পাওয়া যায় নি। ডিসেম্বরে ফাইজার ও মোডের্নার কোভিড টিকা ব্যবহারে ছাড়পত্র
এসে গেলেও ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের বিদায়ের দিন পর্যন্ত জনসংখ্যার এক শতাংশও পুরোপুরি
টিকা পায় নি, যেখানে ব্রিটেনের মতো কিছু দেশ অনেক বেশি টিকাকরণ করে। বস্তুতঃ ট্রাম্পের
প্রশাসনের যাবতীয় অপদার্থতা ও অসহযোগিতা সত্ত্বেও আমেরিকার আরও বড় সংকট এড়াতে পারার
পিছনে দেশের পরিকাঠামো ও বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ দিতে হয়। বিশেষকরে
এত তাড়াতাড়ি প্রতিষেধক টিকা তৈরি হয়ে যাওয়া এবং তাদের কার্যকারিতা এত বেশি হওয়া সমস্ত
মানবজাতির জন্যই খুব সৌভাগ্যজনক ব্যাপার।
রাষ্ট্রপতি
নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী ছিলেন রাজনীতিতে বহুদিনের অভিজ্ঞ জো বাইডেন।
তিনি প্রচারে বলেছিলেন যে কোভিড মোকাবিলাকে প্রথমে তিনি সবথেকে গুরুত্ব দেবেন, বিশেষজ্ঞদের
পরামর্শ মেনে নীতি নির্ধারণ করবেন ও টিকাকরণে গতি আনবেন। এ ছাড়া তাঁর রাষ্ট্রপতিত্বে
যে কাজগুলো গুরুত্ব পাবে, তা হল কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকার কর্মজীবী মানুষের আর্থিক
অবস্থা পুনরুদ্ধার, দেশে উৎপাদনশিল্প ফিরিয়ে এনে কাজ হারানো শ্রমজীবী পরিবারের বিকল্প
কাজের ব্যবস্থা করা, ওবামার চালু করা স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থাকে আরও আকর্ষণীয় করা ও
তার পরিসর বাড়ানো, স্কুলগুলিকে নিরাপদে যত শীঘ্র সম্ভব চালু করা, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার
সুযোগ ও শিক্ষকশিক্ষিকাদের পারিশ্রমিক বাড়ানো, জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করা, বিকল্প
শক্তির ব্যবহারে প্রসার ঘটানো, জাতি ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যে বন্ধ করা, কাজ-হারানোদের
বেকারভাতার পরিসর বাড়ানো, দেশের পরিকাঠামোতে ব্যাপক বিনিয়োগ বাড়ানো, ঘন্টাপ্রতি নুন্যতম
মজুরি বাড়িয়ে পনেরো ডলার করা, ইত্যাদি। এইসব প্রকল্প রূপায়ণে যে খরচ হবে, তা ধনীশ্রেণির
উপর বাড়তি কর বসিয়ে জোগাড় হবে। বাইডেন মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট হওয়া সত্ত্বেও এই ধরণের
কর্মসূচী প্রকৃতপক্ষে প্রগতিশীল নীতি। ফলে ডেমোক্র্যাট দলে প্রগতিশীল অংশের নেতা ভার্মন্টের সেনেটর বার্নি
স্যান্ডার্স ও অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনীতিকরা বাইডেনের এইসব কর্মসূচীর প্রধান সমর্থক
হয়ে ওঠেন। বার্নি স্যান্ডার্স দলের প্রাইমারি পর্যায়ের ভোটে বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী
ছিলেন। বর্তমানে তিনি সেনেট বাজেট কমিটির প্রধান হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করছেন। বাইডেনের নীতি বর্তমানে অনেক বেশি প্রগতিশীল হয়ে ওঠার পিছনে বার্নি স্যান্ডার্সের
ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আইনসভার নিম্নকক্ষ হাউসে ডেমোক্র্যাট দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা
আছে। উচ্চকক্ষ সেনেটে বর্তমানে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান, এই দু দলের শক্তি পঞ্চাশটি
করে সেনেটর নিয়ে সমান-সমান, তবে উপরাষ্ট্রপতি কমলা হ্যারিসের কাস্টিং ভোটে ডেমোক্র্যাটরা
এগিয়ে। সেনেটে অবশ্য বড় কোনও নীতি-নির্ধারণের জন্য ষাট সদস্যের সমর্থন লাগে। রিপাবলিকান
সদস্যরা যে কোনও ধরণের করবৃদ্ধি ও ব্যবসার উপর নিয়ন্ত্রণের বিরোধী তো বটেই, বলা ভালো,
নানা ছুতোয় ডেমোক্র্যাটদের আনা প্রায় যে কোনও উদ্যোগ বানচাল করতে তাঁরা আগ্রহী। ওবামার
রাষ্ট্রপতিত্বের সময়ও রিপাবলিকানদের বাধাদান চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি
বাইডেন ও ডেমোক্র্যাটদের দুটি রাস্তা খোলা আছে। রাষ্ট্রপতি তাঁর বিশেষ ক্ষমতাবলে বেশ
কিছু প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করতে পারেন। তবে সেটা সাময়িক ব্যাপার, আর সবকিছু নীতি
সেভাবে প্রণয়ন করা যায় না। পরিকাঠামো উন্নয়নে যেরকম বিনিয়োগ দরকার, সেনেটের অনুমোদন
ছাড়া তত টাকা পাওয়া সম্ভব নয়, নতুন কোনও কর বসানোও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বাইরে। অন্য
উপায়টি হল ‘বাজেট রিকন্সিলিয়েশন’ পদ্ধতিতে বেশ কিছু অর্থনৈতিক উদ্যোগ সেনেটে শুধুমাত্র
সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে পাশ করানো। তবে তার জন্য সব ডেমোক্র্যাটিক সেনেটারের পূর্ণ
সমর্থন প্রয়োজন। দলের দুজন সেনেটার, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার জো ম্যানসন এবং অ্যারিজোনার
কির্স্টেন সিনেমা, বেশ রক্ষণশীল। তাদের সমর্থন রাখতে খুব প্রগতিশীল নীতি প্রণয়ন করা
অসুবিধা --- অনেকক্ষেত্রেই সমঝোতা করতে হচ্ছে। তবে এসবের মধ্যেও বাইডেনের শাসনকালে
বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ
কাজ হল টিকাকরণ। কারণ কোভিডকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক উন্নতি
সম্ভব হবে না। মানুষও মারা যেতে থাকবে আর ভাইরাসও নিজেকে বিবর্তন করে আরও মারাত্মক
হতে থাকবে। বর্তমানে অর্থনীতির শক্তি অনেকটাই কোভিড শিগগিরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, বাণিজ্য
আর পর্যটন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে --- এইরকম আশার উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে।
বাইডেন প্রশাসন কাজ শুরু করার পরে টিকাকরণের ব্যাপারে বিশেষ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়।
বাইডেন বলেছিলেন তাঁর লক্ষ্য প্রথম একশ দিনে দশ কোটি টিকা দেবার ব্যবস্থা করবেন। এর
জন্য প্রয়োজন হয় যুদ্ধকালীন উৎপাদন আইনের সাহায্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ওষুধ প্রস্তুতকারী
সংস্থা ফাইজার, মোডের্না, মার্ক এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের মধ্যে সহযোগিতা করানো, যাতে
এক সংস্থার টিকা অপর সংস্থাগুলিও তৈরি করার অধিকার ও দায়িত্ব পায়। সেই দশ কোটির লক্ষ্যমাত্রা
অনেকদূর ছাড়িয়ে চব্বিশ কোটি টিকা দেওয়া হয় ওই সময়ের মধ্যে। প্রতিদিনের টিকার সংখ্যা
বাইডেনের অভিষেকের দিন ২০ জানুয়ারি ন লক্ষ ছিল, সেখান থেকে বেড়ে তেত্রিশ লক্ষে পৌছায়
এপ্রিলের মাঝামাঝি। ইতিমধ্যে বারো থেকে ষোল বছর বয়সীদের জন্যও ফাইজারের টিকা ছাড়পত্র
পায়। টিকার অপ্রতুলতার বা স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব হবার কোনও সমস্যা আর থাকে না। এই প্রসঙ্গে
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে টিকা নিতে কারুর কোনও আর্থিক দায় নিতে হয় নি, যদিও আমেরিকা
একটা পুরোপুরি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। যাদের স্বাস্থ্যবিমা আছে, তাদের
টিকার পুরো খরচ বিমা সংস্থা দিয়েছে। বাকিদের টিকার খরচ রাষ্ট্র যুগিয়েছে। তার জন্য
নাগরিক বা আইনি অভিবাসী হতে হয় নি, কোনও কাগজপত্রও দেখাতে হয় নি। আমেরিকায় বহু বেআইনি
অনুপ্রবেশকারী আছে, তাদেরও রাষ্ট্র বিনামূল্যে টিকা দেবার ব্যবস্থা করেছে। এর কারণ
বোঝা শক্ত নয়। কোভিডকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আইনি-বেআইনি সবারই প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তুলতে
হবে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে, কারণ সংক্রমণ কোনও বাছবিচার করে না। রাষ্ট্রের কাছে এই খরচটা আরও
অনেক বেশি ক্ষতিকে আটকানোর উপায়। বিমা সংস্থারাও জানে টিকার জন্য সামান্য খরচ করলে
ভবিষ্যতে অনেক বড়ো খরচ তারা এড়াতে পারবে।
কিন্তু দুঃখের
বিষয়, প্রাথমিক পর্যায়ে গতি আসার পর থেকে দৈনিক টিকা দেবার সংখ্যা কমতে কমতে মাত্র
পাঁচ লক্ষে এসে পৌছায়, কারণ আমেরিকার বহু মানুষের টিকার উপর ভরসা নেই। এই সমস্যা বিশেষ
করে রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটি মাঝের এবং দক্ষিণের রক্ষণশীল রাজ্যগুলিতে অত্যন্ত প্রকট।
এর ফলে শতাংশের হিসেবে টিকাকরণ জনসংখ্যার পঞ্চাশ
শতাংশের সামান্য বেশিতে পৌঁছে থমকে গেছে। অথচ গোষ্ঠিগত রোগ প্রতিহত করার ক্ষমতা (herd
immunity) পেতে কোভিডের মতো ছোঁয়াচে রোগের জন্য জনসংখ্যার অন্ততঃ সত্তর শতাংশকে টিকা
দিতে হবে। বিভিন্ন রাজ্য এখন টিকা নেবার উৎসাহ বাড়ানোর জন্য পুরস্কার দিচ্ছে লটারির
ভিত্তিতে, যার পরিমাণ দশ লক্ষ ডলার। অনেক রাজ্যে প্রতি মাসেই একাধিকবার এরকম পুরস্কার
দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে তার জন্য রাজ্যগুলির জন্য বাড়তি টাকা বরাদ্দ করাও
হয়েছে। নীতিতিগতভাবে, টিকা নিলে পুরস্কার দেওয়া হাস্যকর ব্যাপার মনে হলেও, আসল উদ্দেশ্য
যেখানে যতসম্ভব লোককে টিকা দিয়ে অতিমারিকে নিয়ন্ত্রণ করা, সেখানে এই খরচটা আমেরিকার
মতো বড়ো দেশের পক্ষে কিছুই নয়। তবে তাতে যে পরিস্থিতির খুব উন্নতি হয়েছে, তা নয়। শুরুতে
কিছু বাড়তি অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেলেও তা ঝিমিয়ে পড়েছে। একটা বিরাট সংখ্যক মানুষ গোঁ
ধরে রয়েছে তারা কিছুতেই টিকা নেবে না। বিকৃত তথ্য পরিবেশন করে কিছু গোষ্ঠীও এ ব্যাপারে
ইন্ধন যোগাচ্ছে, টিকার প্রতিক্রিয়াকে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করছে। অবস্থা এমন যে টিকা রয়েছে
প্রচুর, তা নষ্ট হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে, কিন্তু নেবার লোকের অভাব। যেখানে বাকি পৃথিবীতে
বহু জায়গায় মানুষ টিকার নেবার জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে আছে, চেয়েও পাচ্ছে না, সেখানে
এই ধরণের অপচয় শুধু দুঃখজনকই নয়, ভবিষ্যৎপরিস্থিতির জন্য উদ্বেগজনক। টিকা না নেওয়া
লোকেদের মধ্যে কোভিডের ডেল্টা ভেরিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আবার। শেষ কয়েকদিনে আবার
আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যায় উর্দ্ধগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমেরিকা একরকম দুটি দেশে বিভক্ত
হয়ে যাচ্ছে --- একদল মানুষ টিকা নিয়ে প্রায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারছে তো আর
একদল মানুষ টিকা না নিয়ে মারাত্মক বিপদের মুখে গিয়ে পড়ছে।
বাইডেনের অন্যান্য
বিষয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল তাঁর রাষ্ট্রপতিত্বের একশ দিনের মধ্যে আরও এক লক্ষ
নব্বই হাজার কোটি ডলারের ‘আমেরিকা রেস্কিউ প্ল্যান’ পাশ করিয়ে পরিকাঠামো ও অর্থনৈতিক
সংস্কার, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে মোকাবিলা করা। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের
সময়ে আমেরিকা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিল, বাইডেন আবার সেখানে আমেরিকাকে
ফেরত নিয়ে গেছেন। মার্চ মাসে আইনসভা বাইডেনের পরিকল্পনা অনুমোদন করে, যদিও কিছু কিছু
জায়গায় কাটছাঁট করতে হয়। যেমন ঘন্টাপ্রতি পনের ডলারের ন্যূন্যতম মজুরি এখনও চালু করা
যায় নি। তবে অনেককিছু হয়েছে, যেমন আরও চোদ্দশ ডলারের চেক দেওয়া হয়েছে সাধারণ আমেরিকান
পরিবারগুলিকে স্টিমুলাস হিসেবে, বেকারভাতা দেওয়ার মেয়াদ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো
হয়েছে, রাজ্যগুলিকে পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি ডলারের বাড়তি সাহায্য দেওয়া হয়েছে। ফুড স্ট্যাম্প
কর্মসূচী, যার মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলিকে খাবার কেনার খরচ যোগানো হয়, তা পনের শতাংশ
বাড়ানো হয়েছে। বাকি পৃথিবীর জন্যও বাইডেন টিকা তৈরিতে চারশ কোটি ডলার আমেরিকান অনুদান
বরাদ্দ করেছেন, কারণ কোভিড সমস্যা একটি পৃথিবীব্যাপী সমস্যা --- পুরো পৃথিবী থেকে নির্মূল
না হলে আমেরিকাও নিরাপদ হবে না। এগুলো অবশ্য আপদকালীন ব্যবস্থা। দীর্ঘমেয়াদে উন্নতির
জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ওবামার চালু করা স্বাস্থ্যবিমা
প্রকল্পের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য সড়ক ও সেতু নির্মান, উন্নতি
ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হবে। আমেরিকার রেলপথ, যা মোট দৈর্ঘ্যে পৃথিবীর
দীর্ঘতম কিন্তু আধুনিকিকরণ না হবার ফলে ইউরোপ বা এশিয়ার বেশ কিছু দেশগুলির থেকে মানে
অনেক পিছিয়ে পড়েছে, তাকে আবার পুরোদমে চালু করার জন্য সাড়ে বাইডেন আট হাজার কোটি ডলারের
বিনিয়োগ করার প্রস্তাব রেখেছেন। এছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ানো এবং পেট্রল-ডিজেলের
গাড়ির ব্যবহার ও উৎপাদন ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেবার মতো নীতি চালু করার চেষ্টা চলছে।
বিকল্প শক্তির উৎপাদনে বাড়তি বিনিয়োগ করে তাকে প্রধান শক্তির উৎস করার মতো পরিকল্পনা
রয়েছে। পুরো আমেরিকাকে নতুন অর্থনীতিতে পুরোপুরি উপযুক্ত করার জন্য প্রয়োজন সর্বত্র
ব্রডব্যান্ড পরিষেবা, বিশাল দেশের গ্রামীণ এলাকায় যা অমিল বা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ।
বাইডেনের এই সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছেন। স্কুলের শিক্ষায় বাড়তি
বিনিয়োগ, কমিউনিটি কলেজগুলিতে প্রথম দুবছরে বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ দেওয়া, শিশুদের
ডে কেয়ারের সুলভ ব্যবস্থা করা, শিশুপিছু নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারদের করছাড় দুহাজার
থেকে বাড়িয়ে ছত্রিশশো ডলার করা, আর যে কোনও জীবিকাতেই পিতৃত্ব-মাতৃত্বকালীন
সবেতন ছুটির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। উল্লেখ্য, আমেরিকাই একমাত্র উন্নত
দেশ যেখানে পিতৃত্ব-মাতৃত্বকালীন সবেতন ছুটির কোনও দেশব্যপী আইন নেই --- নিয়োগকর্তার
নীতির উপর নির্ভরশীল। তবে এইসব পরিকল্পনা রূপায়নের জন্য যে দুই থেকে চার লক্ষ কোটি
ডলারের অর্থের প্রয়োজন, তা প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়ে হবে না। তার জন্য আইন পাশ করাতে
হবে ও বাড়তি কর চাপিয়ে সেই টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। বাইডেনের পরিকল্পন্ উচ্চতম করের
হার ট্রাম্পের আগে যে ৩৯.৬% ছিল, সেখানে নিয়ে যাওয়া, আর দশ লক্ষ ডলারের উপর যেসব পরিবারের
বার্ষিক আয়, তাদের মূলধনী লাভের (capital gain) উপর সাধারণ আয়ের হারে কর বসানো। আর
চার লক্ষের কম বার্ষিক আয়ের পরিবারদের উপর কোনও
কর না বাড়ানো। প্রচুর আয়ের পরিবারদের আয় হয় মূলতঃ মূলধনী লাভ থেকে যার হার অনেক
কম, ফলে ধনীরা বেশিরভাগক্ষেত্রেই মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তদের কম হারে কর দিয়ে পার পেয়ে
যেতে পারে। তাছাড়া বড় ব্যবসাগুলি প্রচুর আইনি উপায়ে কর এড়াতে পারে। আমাজনের মতো বিশাল
কোম্পানি বেশ কয়েকবছরে কোনও কর দেয় নি, কারণ তারা বিনিয়োগের খরচ দেখিয়ে কর ছাড় পেয়েছে।
ধনীদের ও কর্পোরেশনের উপর কর বসানোয় রিপাবলিকানদের সহায়তা পাবার সম্ভাবনা শূণ্য, ফলে
ডেমোক্র্যাটরা আলোচনা করছেন কিভাবে এই পরিকল্পনাগুলো রূপায়ণ করা যায়। মোটামুটিভাবে
তাঁরা বাজেট রিকন্সিলিয়েশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে এ ব্যাপারে এগোতে চাইছেন। তারা নিজেদের
মধ্যে সাড়ে তিন লক্ষ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে মোটামুটি একমত হয়েছেন।
সরকারি বিনিয়োগ
বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা একটা পরীক্ষিত পদ্ধতি, তবে তার বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আছে। জাতীয় ঋণ বেড়ে এখন আঠাশ লক্ষ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, যা জাতীয় মোট বার্ষিক উৎপাদনের
বেশি। শতাংশের হিসেবে সেটা অবশ্য সেরকম মারাত্মক পরিমান নয়, অনেক দেশেরই সেই অনুপাত
অনেক বেশি, জাপানের অনুপাত তো আমেরিকার প্রায় আড়াইগুণ। আমেরিকার ঋণ শোধ দেবার ক্ষমতা
নিয়ে এখনও বাজারের কোনও সংশয় দেখা দেয় নি। তবে কোভিডের আগের থেকে জাতীয় ঋণ প্রায় চার
লক্ষ কোটি ডলার বেড়ে গেছে। বাজেট ঘাটতিও এখন বেড়ে প্রায় তিন লক্ষ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এগুলো কতটা আশংকাজনক, তাই নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। অনেকেই মনে করেন ঘাটতি
করেও বিনিয়োগ বাড়িয়ে জাতীয় উৎপাদন বাড়াতে পারলে লাভ বেশি হয়, বিশেষতঃ যখন সুদের হার
কম আছে। তবে যেটা সত্যিকারের মারাত্মক হয়ে দেখে দিতে পারে, তা হল মুদ্রাস্ফীতি। বাজারে টাকার যোগান বাড়ালে প্রায় অবধারিতভাবেই
মুদ্রাস্ফীতি বাড়ে। শেষ তিন মাসে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশের মতো হয়েছে।
একটা উন্নত অর্থনীতির পক্ষে এই পরিমান বেশ বেশি, কারণ তাদের বৃদ্ধির সুযোগ কম। কোভিডের
চরম অবস্থার সময় অনেক জিনিষ উৎপাদন করতে পারা যায় নি। চাহিদা বাড়ার ফলে এখন সেইসব জিনিষের
দাম অনেক বেড়ে গেছে। জ্বালানী তেলের দামও এখন বেশ চড়া। আর মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে
বাড়ির দাম, কারণ চাহিদার থেকে নতুন বাড়ি কম বাড়ি তৈরি হয়েছে আর লোকে কোভিডের কারণে
বাড়ি বিক্রি করতে অনীহা করেছে। বাড়ি তৈরির কাঁচামাল অমিল বলে নতুন বাড়ি তৈরির খরচ বেড়ে
গেছে। আপাতভাবে মনে হতে পারে যে বাড়ির দাম বাড়লে বাড়ির মালিকের পক্ষে তা ভাল, আর বেশিরভাগ
পরিবার যেহেতু বাড়ির মালিক, তাতে সামগ্রিকভাবে দেশের ভালোই। মুস্কিল হল অনেক জায়গায়
এই মূল্যবৃদ্ধি মানুষের রোজগার বৃদ্ধির তুলনায় এতই বেশি যে স্থানীয় মানুষের বাসস্থান
সমস্যা দেখা দেয়, বিশেষকরে যারা প্রথম বাড়ি কিনছে। অর্থনীতির বাস্তুতন্ত্র তাতে নষ্ট
হয়ে যায়। সবার হঠাৎ করে রোজগার বাড়ার তেমন সুযোগও থাকে না। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
করতে না পারলে অনেক পরিবার আবার দারিদ্র্য সীমার নীচে চলে যাবে। আর একটা সমস্যা হয়েছে
উপযুক্ত কর্মীর অভাবের। এর ফলে অনেক ব্যবসা পুরোদমে চালু থাকছে না। রিপাবলিকানরা অভিযোগ
করেছে লোকের হাতে সহজেই টাকা তুলে দেবার ফলে আর বেকারভাতা খুব উদারভাবে দেবার ফলে কর্মীদের
কাজে যোগ দিতে অনীহা রয়েছে, কারণ তারা রোজগারের থেকে ভাতা বেশি পাচ্ছে। ডেমোক্র্যাটদের
বক্তব্য ব্যবসাগুলি যথেষ্ট মজুরি দিতে রাজি থাকলে এই সমস্যা হয় না। সুতরাং তাদের উচিৎ
ঘন্টা হিসেবে কাজ করা কর্মীদের পারিশ্রমিক বাড়ানো। বস্তুতঃ মুদ্রাস্ফীতির হিসেব মাথায়
রাখলে সেই সত্তর দশক থেকে আমেরিকার সাধারণ কর্মীদের ঘন্টাপ্রতি প্রকৃত মজুরি বাড়ে নি,
অনেকে পুরোসময়ের জন্য কাজ করেও সরকারি ফুড-স্ট্যাম্পের উপর নির্ভরশীল। কম মজুরি দিয়ে
ম্যাকডোনাল্ডের মতো অনেক বড়ো কর্পোরেশনও পরোক্ষভাবে সরকারি ভর্তুকি নিচ্ছে আর নিজেদের
মুনাফা বাড়াচ্ছে। কোভিডের সূত্রে হলেও এইধরণের সংশোধন বিশেষ কাম্য।
বাইডেন প্রশাসনের
সংস্কার ও বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলি খুবই আশাবাদী, বাস্তবে কতটা রূপায়িত হবে তা সময়ই বলবে।
তবে এরকম ব্যাপক সংস্কার আমেরিকায় বহুদিনের অপেক্ষিত। কোনও সংকটের সময়ই সব থেকে বড়ো
প্রগতি হয়। মহামন্দা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি
রুজভেল্ট তাঁর বিখ্যাত ‘নিউ ডিল’ পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাপক সরকারি বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক
ও সামাজিক সংস্কার করেছিলেন। তার দুই দশক পরে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের (civil
rights movement) প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি লিন্ডন জনসন খুব গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক
সংস্কার করেছিলেন। বাইডেনের পরিকল্পনাগুলির সঙ্গে সেইসব সংস্কারের তুলনা হয়েছে। যদি
বাইডেন মোটের উপর সফল হন তাঁর পরিকল্পনাগুলিকে রূপায়ন করতে, তাহলে তিনি আমেরিকার ইতিহাসে
বিশেষ জায়গা করে নেবেন।
--------------------
লেখার তারিখঃ ২১ জুলাই, ২০২১
প্রথম প্রকাশঃ সৃষ্টির একুশ শতক, নভেম্বর ২০২১ সংখ্যা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন