শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

প্রেম, অপ্রেম, নষ্টপ্রেমের পদ্য

প্রেম, অপ্রেম, নষ্টপ্রেমের পদ্য

-শুভাশিস ঘোষাল


                                 প্রেম ।।




চল, ওই খোলা মাঠে
চিৎ হয়ে শুয়ে গুনি
আকাশের তারা, কতজন ভীরু
লাজুক শরীর ঢাকে
এই ফাল্গুনের জ্যোৎস্নায়,
শিয়রে চঞ্চল মেঘ
কতদূর ওড়ে।
দেখ, ওই ধূসর পাহাড়ের বুকে
সবুজ ঘাসের পান্ডুলিপি।
সেই ঘাসে বসি তবে
যখন সন্ধ্যা নামে শান্ত সমারোহে;
শাল-মহুলের পাতা কুড়িয়ে
ঘরে ফেরে গাঁয়ের মেয়েরা,
লালপেড়ে সাদা শাড়ি
শঙ্খমালার মতো পাকদন্ডী পথে।
অথবা সাগরের পাড়ে বসে
ঢেউ গুনে গুনে যাই পড়ন্ত বিকেলে।
কিংবা দোতলা বাসে লন্ডন,
ডাবলিন হোক বা কলকাতার পথে ---
একমুঠো রোদ্দুর মেখে নিয়ে গায়,
কোনও এক কাফেতে মুখোমুখি বসে
সময় কাটাবো তবে অলস সন্ধ্যায়।
মোট কথা, যাই হোক, যেখানেই হোক,
তোর সাথে কাটাব অনেকটা সময়
অকারণ  ---  অবকাশ ঠিক খুঁজে নেব,
দুদন্ড থাকিস যদি পাশে।


                           অপ্রেম ।।



ভাল লাগে না এই নিস্তরঙ্গ জীবন
শুধু সুখ অনুভূতি, শুধু ভালোলাগা,
শুধু প্রেম, নৈঃশব্দ, নক্ষত্রের তলে ---
ঢেউ গুনে গুনে চলে গিয়েছে প্রহর;
কতদিন সাগরের জল, বৃথাই উদ্বেল হয়
চাঁদের শরীরের টানে। ভুলে গেছি কতদিন
নীল অবসরে, কলিঙ্গযুদ্ধ আজও হয় নি তো শেষ;
এখনও রক্তনদী কুরুবর্ষ থেকে, সৌপ্তিকপর্বে
কিংবা প্রকাশ্য দিনে --- অনন্ত বৃষ্টির মতো
বোমা ঝরে, সাম্রাজ্যের নিত্য প্রয়োজনে।
কবে যেন শুনেছি শ্রাবস্তীর পথে
সেই বার্তা --- কথা ছিল নিয়ে যাব
দূর দেশে, মহেন্দ্রর সাথে ---
তারপর বহুদিন কেটে গেছে বিশ্রম্ভালাপে
বয়স গিয়েছে বেড়ে পৃথিবীরও ঢের।
তবু, দেখা যাক, একবার
পৃথিবীর পথে হেঁটে;
কতদূর অন্ধকার গলি বা প্রাসাদে,
যদি দাও বিদায় এবার।
আর যদি এখনও হাত রাখো হাতে,
তবে যাই দুজনে একসাথে হেঁটে
এই পৃথিবীর পথে, একবার দেখি
পারি নাকি দুজনে কিছু আঁধার সরাতে
এই ফাল্গুনের জ্যোৎস্নার আলোতে।


                           নষ্টপ্রেম ।।



কথা ছিল ওই নীলপাহাড়ের গায়ে
অথবা লালমাটির দেশে জঙ্গলের পথে
কিংবা জলা-ডোবার দেশে পানাপুকুরের পাশে
বা হয়তো নিতান্তই সাদামাটা মফঃস্বল শহরে
কোথাও একটু হবে নিজের সংসার
একটা ছোট্ট কুঁড়ে
বা ভাড়া নেওয়া এককামরা ঘরে
ভালোলাগার মানুষটার সাথে;
ভাত বেড়ে দেবে তাকে মেয়েলি হাতে,
সারাদিন শ্রম শেষে রাতের প্রণয়
জীবনের নিত্য ওঠাপড়া
ভাগ করে নেবে সেই একচিলতে ঘরে,
স্তন্য দেবে শিশুদের মুখে
রোদ্দুরে খেলবে ওরা উঠোনের কাছে।
সেসব স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন রয়ে যায়,
কখনও যুদ্ধ, কখনও মন্বন্তরে
উৎখাত ভিটে থেকে --- উদ্বাস্তু শিবিরে
সেখানে প্রতিদিন মৃত্যু মাংসলোলুপ হাতে।
অথবা হয়তো ভুল লোকে ভালোবেসে
আড়কাঠি হাত ঘুরে বিকিয়েছে বহুবার;
কতবার মরে গেল অপমানে লজ্জায় ---
শেষমেশ কাল রাতে ফাল্গুনের জ্যোৎস্নায়,
রূপোলি স্বপ্ন যখন পৃথিবীতে ঝরে
শেষবার মরে গেছে অন্ধকার বিছানায়,
আধ-খাওয়া খাবার পড়ে, মাছি ওড়ে।


----------
প্রথম প্রকাশ, ভ্যালেনটাইন ডে ২০১৯, ফেসবুক

কপিরাইটঃ শুভাশিস ঘোষাল 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন