শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

মন্বন্তরের শেষে


মন্বন্তরের  শেষে

-শুভাশিস ঘোষাল

লাঙ্গল পড়েনি মাঠে কতকাল
নিড়োনো হয়নি ঝোপ আগাছা,
কতদিন ফলেনি ধান --- চাল
শেষ কবে হয়ে গেছে বাছা।
ফুরিয়েছে ইঁদুরের ভাঁড়ার
কুড়োনো খুদের সযত্ন সঞ্চয়;
প্লেগ, ক্ষুধা আর রাত্রির আঁধার
বুকফাটা তৃষ্ণায় জীবনের ক্ষয় ---
শস্যহীন অঘ্রাণের মাসে
শিশির লেহন করে যদি তৃষ্ণা মেটে
মহার্ঘ্য শিশির তবু কই আসে
হেমন্তের কুয়াশার পথে পথে হেঁটে?
পৃথিবীর শরীর জুড়ে অজস্র ক্ষত
বয়সিনী রূপজীবিনীর বিবর্ণ মুখের মত,
মিশর-ব্যাবিলন আজ পাথুরে ইতিহাস
তার স্থির হয়ে আসা শ্বাস,
ফুসফুসে গভীর অসুখ;
অ্যামাজন জ্বলে, এক বুক
ক্যান্সার নিয়ে। তবু একদিন
সে আসিবে এক ঈশ্বরীর সাজে
সদ্যোস্নাত কেশরাজি হাওয়ায় উড্ডীন
মদের শীতলতা তার শরীরের ভাঁজে
দেহবৃন্তে ফোঁটা ফোঁটা শিশিরের জল
চুঁয়ে পড়ে জুড়িয়েছে মাঠের ফাটল,
আবার সবুজ ঘাস সময়ের স্রোত বেয়ে
ঘাসফড়িঙের লাফ ডানে আর বাঁয়ে,
নদী আর অরণ্যের গল্প বলা হলে
ঘুমায়ে পড়িব ভিড় আকাশের তলে। 


----------

প্রথম প্রকাশিত ঃ সেপ্টেম্বর ২০১৯,  দিগন্ত
বেঙ্গলি এসোসিয়েসন অফ নর্থ ক্যারোলাইনার শারদ ম্যাগাজিন

কপিরাইটঃ শুভাশিস ঘোষাল 




বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

শয়তানের মিনার ও তার সাতটি তারার রূপকথারা

শয়তানের মিনার ও তার সাতটি তারার রূপকথারা

-শুভাশিস ঘোষাল




ওয়াইওমিং (Wyoming) প্রদেশের একদম উত্তরপূর্ব কোণে, ইন্টারস্টেট ৯০ থেকে মাইল পঁচিশেক ঢুকে এলে, বিরাট উপত্যকার মধ্যে, অন্ততঃ দশ মাইল দূর থেকে যেটা চোখে পড়বেই, তা হল হঠাৎ করে উঠে যাওয়া এক বিরাট মনোলিথ পাথর, ১২৬৭ ফুট উঁচু। ডেভিলস টাওয়ার --- শয়তানের মিনার। ভারি অদ্ভুত দেখতে, তার সারা গায়ে যেন অজস্র আঁচড়ের দাগ। পাশ দিয়ে যেতে যেতে বেল ফুস (Belle Fourche) নদী পুরো জায়গাটাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রয়েছে। কুড়ি কোটি বছর আগে জুরাসিক যুগে জায়গাটা অবশ্য  সম্পূর্ণ অন্যরকম ছিল। আমেরিকার মাঝবরাবর তখন এক বিরাট অগভীর সমুদ্র। সে জায়গাটা কখনও জলে মগ্ন থাকে, কখনও আবার জল সরে গিয়ে শুখনো ডাঙ্গা বেরিয়ে আসে। আর সামুদ্রিক নানা প্রাণীর দেহাবশেষ জমা হয়। আর ফেল্ডস্পার সমৃদ্ধ আগ্নেয়শিলা ফোনোলাইটের সঙ্গে মিশে যায় দানা দানা খনিজপদার্থরূপে। সাড়ে তেইশ কোটি বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে লাল বেলেপাথর আর মেরুন পাললিক শিলা মিলে স্পিয়ারফিশ গঠন (spearfish formation) হয়েছিল। আজ থেকে পাঁচ কোটি বছর আগে নদীর জল, ঝর্ণা আর হাওয়া পাথরকে কেটে কেটে ফেলতে থাকে। যে অংশটা ছিল খুব শক্ত, তাকে আর হারাতে পারে নি, সে রয়ে গেছে এই বিরাট পাথরের চাঁই হয়ে। ভাঙ্গনের কাজ যদিও এখনও চলছে, ছোট ছোট পাথরের টুকরো এখনও ভেঙ্গে গড়িয়ে পড়ে।

এ তো গেল ভূতাত্বিক পরিপ্রেক্ষিতের সংক্ষিপ্তসার, যার সামান্যই আমার জানা। ডেভিলস টাওয়ারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক মানুষের গল্পও। ডেভিলস টাওয়ার এলাকায় আমেরিকার ভূমিপুত্রকন্যা নেটিভ আমেরিকান লালমানুষেরা বহুদিন ধরে বাস করেছে। শুধু এক গোষ্ঠীর নয়, এই অঞ্চলে থেকেছে --- কিওয়া (Kiowa), লাকোটা (Lakota), শায়ান (Cheyenne), সিউ (Sioux), আরাপাহো (Arapaho), ক্রো (Crow), শোশোনি (Shoshone) এই ধরনের অনেক গোষ্ঠীর নেটিভ আমেরিকান উপজাতি। বহু হাজার বছর আগে তাদের তৈরি পাথরের হাতিয়ার পাওয়া গেছে এখানে। পাহাড়ের নিচের উপত্যকায় অঢেল ছিল বাইসন, হরিণ, এন্টিলোপ, বুনো মোষ --- তার টানেই এসেছিল ওরা। এই পাথর ছিল তাদের কাছে এক অত্যন্ত পবিত্র জায়গা। এখানে তারা তাঁবু গাড়ত, শিকার করত। আর কখনও শিকারও হয়ে যেত ভালুক কিংবা নেকড়ের পালের। শ্বেতাঙ্গরা এসে জোর করে খ্রীষ্টধর্ম গেলানোর আগে পর্যন্ত তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল না কিছু। তাদের ঈশ্বর বলতে ছিল এক মহান শক্তি, যা বস্তুতঃ প্রকৃতি। তারা যত্ন নিত সেই প্রকৃতির, আর প্রকৃতিও দিত উজাড় করে। ডেভিলস টাওয়ার দেখে তাদের মনে অসীম কৌতুহল হত, কি করে অমন খাড়া একটা পাথর রয়েছে হঠাৎ করে, আর কেনই বা তার গায়ে উপর-নিচ করে অত দাগ? ভূতত্ববিদ্যা তাদের জানা  ছিল না, কিন্তু তারা উত্তর খুঁজত, আর ব্যাখ্যা করেও নিয়েছিল নিজেদের মত করে, নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে।
শীতকালের রাতে টাওয়ারের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে সাতটা তারা ঠিক তার গা ঘেঁষে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই সাতটি তারা মিলে হয় জেমিনি ঋক্ষ (Gemini Constellation); তার সব চেয়ে উজ্জ্বল দুটো তারা হল ক্যাস্টর (Castor) আর পোলাক্স (Pollux)। একটু এলানো চতুর্ভুজাকৃতি; ঠিক যেন একটা ভালুক রয়েছে আকাশের গায়ে। আকাশের সাতটি তারা একত্রে মানুষের কল্পনাকে সব সময় নাড়া দিয়েছে। কালপুরুষ মানুষ কল্পনা করেছে। জীবনানন্দের কবিতায় তাই সাতটা তারা ঘুরে ফিরে আসে। এই  টাওয়ার, ভালুক আর সাতটি তারা ঘিরে নেটিভ আমেরিকানদেরও অজস্র রূপকথা গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নানা রূপকথা হলেও তাদের মধ্যে বেশ অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রায় সব গল্পেই আসে ভালুক তাড়া করা আর নখ দিয়ে পাথরে আঁচড়ানোর কথা। ডেভিলস টাওয়ারকে তারা বলত ভালুকের বাড়ি।



আরাপাহো রূপকথা অনুযায়ী বহুদিন আগে পৃথিবী জলে ডুবে ছিল, ঠিক যেমন হিন্দু বা খ্রীষ্টান শাস্ত্রে মহাপ্লাবনের কথা আছে। সেই জলে ভরে থাকা পৃথিবীতে ছিল না কোনো ডাঙ্গার প্রাণী, শুধু একটা উঁচু  পাথর ছিল, আর তার উপরে কোনোমতে থাকত এক দুঃখী আরাপাহো মানুষ। মহান শক্তি তার কষ্ট দেখে তিনটে হাঁসকে পাঠিয়েছিলেন তার কাছে। সেই আরাপাহো লোকটি প্রথম হাঁসটাকে দেখে বলল একটু মাটি মুখে করে তুলে আনতে। কিন্তু এত জল যে প্রথম হাঁসটা তল খুঁজেই পেল না, ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল। দ্বিতীয় হাঁসটারও একই দশা হল। তৃতীয় হাঁসটা জলে ডুব দিল তো আর ওঠে না --- ডুব দেওয়ার জায়গার জল স্থির হয়ে গেল, তবু তার দেখা নেই। সবাই যখন ভাবছে যে সে ডুবে মরেই গেছে, তখন সেই হাঁসটা একটু মাটি মুখে নিয়ে উঠে এল, আর সেই মাটি লোকটিকে  দিল। মাটি নিয়ে সে ছড়িয়ে দিল চারিদিকে, আর তাতেই জল সরতে শুরু করল। অল্প সময়েই এত দূর ডাঙ্গা দেখা গেল যে উঁচু পাহাড়ের উপর থেকেও আর জল দেখা যাচ্ছিল না। লোকটি সেই সসাগরা ধরার অধিপতি হল ও দৈব ক্ষমতা পেল। তখন সে একে একে পাহাড়, নদী, বন আর নানা পশুপাখির সৃষ্টি করল। সেইখানে থাকতে এল প্রথমে শায়ানরা, তারপর একে একে সিউ, শোশোনি আর অন্যরা। মানুষটি তাদের শিকারের জমি আর ঘোড়া দিল, কি করে তির-ধনুক ছুঁড়তে হয় শেখালো, কি করে দুটো কাঠি ঠোকাঠুকি করে আগুন জ্বালাতে হয় তাও। শোশোনিরা বাড়ি বানাতে জানত না, তাদেরকে কিভাবে চামড়ার তাঁবু টানাতে হয় দেখালো। আর সবাইকে মিলেমিশে থাকতে বলল, বিশেষ করে আরাপাহোদের সাথে।


কিওয়াদের রূপকথায় আছে এক বাড়িতে থাকত সাত বোন আর একটা ভাই। তারা লুকোচুরি খেলছিল। কথা ছিল বোনেরা লুকোবে আর ভাইটি ভালুক সাজবে আর তাদের খুঁজতে আসবে। কিন্তু বোনেরা দেখল খেলতে গিয়ে ভাইটি সত্যিই একটা ভালুকে পরিণত হয়েছে আর তাদের তাড়া করেছে। তারা তখন প্রাণের ভয়ে পালাচ্ছিল। একটা পাথর তাদের বলে তার উপরে চড়ে পড়তে। পাথরটা তখন বিশাল উঁচু হয়ে হয়ে ভালুকের লাগালের বাইরে চলে যায়। ভালুকটা তখন রাগে পাথরে আঁচড়াতে থাকে আর পাথরের গায়ে দাগ হয়ে যায়। বোনেরা আকাশে সাতটি তারা হয়ে টাওয়ারের ঠিক উপরে অবস্থান করে।

কিওয়ারা বর্তমানে আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বাসিন্দা। তবে এক সময় তারা উত্তর দেশে বাস করত। কানাডার দক্ষিণপ্রান্ত থেকে একটু একটু করে সরে তারা মিনেসোটা-উইসকন্সিন পেরিয়ে  ড্যাকোটা প্রদেশের মধ্যে দিয়ে এসে পূর্ব ওয়াইওমিঙ্গের ছোট-মিসৌরি নদীর (Little Missouri River) তীরে আস্তানা গেড়েছিল। এর পরের গল্পে তাদের সেই স্থানান্তরের আভাস পাওয়া যায়। এক কিওয়া পরিবারে ছটি ছেলে ও দুটি মেয়ে ছিল। একটি মেয়ের শখ ছিল মুখে রঙ মাখার। একবার মুখে রঙ করে নদীর ধারে গিয়েছিল, তখন একটা ভালুক তার মুখ চাটতে থাকে। মেয়েটি খুব মজা পায়। এরকম পরপর কদিন চলতে থাকে। তারপর ভালুকটা যাদু করে মেয়েটিকেও একটি বিরাট ভালুকে পরিণত করে। তারপর ভালুকে রূপান্তরিত মেয়েটি তার ভাইবোনেদেরও যাদু করবে বলে ধাওয়া করে। অন্য ভাইবোনেরা পশ্চিমদিকে পালাতে থাকে। দক্ষিণ ড্যাকোটা প্রদেশে ব্যাডল্যান্ডের (Badlands) কাছে ভালুকটা যখন ওদের প্রায় ধরে ফেলেছে, ওরা বুনো মোষের নাড়িভুঁড়ি ছুড়তে থাকে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। এক একটা টুকরো মাটিতে পড়ছিল আর ছোট ছোট পাহাড়ের সৃষ্টি হচ্ছিল। এইভাবেই ব্যাডল্যান্ডের পাহাড়গুলোর সৃষ্টি হয়। এইভাবে আরো খানিকটা গিয়ে ব্ল্যাকহিল (Black Hill) অঞ্চলে পৌঁছলে ঘন বন ভালুকটার গতি কমিয়ে দেয়। বাচ্চাগুলোও পালিয়ে পূর্ব ওয়াইওমিঙ্গে এসে ভীষণ পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে। উপায়ান্তর না দেখে তারা মহান শক্তির প্রার্থণা শুরু করে। তখন একটা পাথর তাদের তার উপর চড়ে উঠতে বলে। বাকি ঘটনাটা আগের গল্পের মতই, শুধু বাড়তি হল যে মহান শক্তি ভালুককে মেরে লেজ আর কান কেটে দেন। সেই থেকেই ভালুকদের লেজ আর কান ছোট, আর কিওয়ারাও আর ভালুকের মাংস খায় না।

আরাপাহোদের একটা রূপকথায় আছে এক পরিবারে পাঁচ ভাই আর দুই বোন ছিল। বোনেরা দুজনে প্রতিযোগিতা করছিল বুনো মোষের পিছনে হাড় খোঁজার। কিন্তু এক বোন যখন সেটা খুঁজে পায়, সে ভালুকে পরিণত হয়। সে তখন হাড়টি দিয়ে অন্য বোনের পিঠে দাগ দিয়ে বলে ভাইদের না জানাতে যে সে ভালুক হয়ে গেছে। যদি সে বলে দেয়, তাহলে কুকুরগুলো চ্যাঁচাবে, আর সে ঠিক বুঝে যাবে। কিন্তু বারণ না শুনে বোনটি ভাইদের বলে দেয়, আর কুকুরগুলো চ্যাঁচাতে শুরু করে। ভালুকে রূপান্তরিত মেয়েটি তখন তার বোনকে তাড়া করে। তার হাতে একটা বল ছিল, পালাতে গিয়ে তার হাত থেকে পড়ে যায় আর মেয়েটি ভুল করে তাতে লাথি মেরে ফেলে। বলটা খুব উঁচুতে উঠে একটা পাথরে আটকে যায়। ভালুক হয়ে যাওয়া মেয়েটি বলটা ধরতে পাথরে উঠতে যায়, কিন্তু ঠিকমত উঠতে না পেরে পাথর থেকে গড়িয়ে পড়ে বোনের গায়ের উপর। অত বড় ভালুকের চাপে মেয়েটির পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে যায়। গড়িয়ে পড়ার পথে ভালুকের নখের আঁচড়ে পাথরে খাঁজ খাঁজ দাগও হয়ে যায়। ভালুক হওয়া মেয়েটির খুব দুঃখ হয়। সে শেষমেষ পাথরে চড়ে চিৎকার করে বলে যে পুব আকাশে সাতটা তারা উঠবে এখন থেকে, আর একটা হবে তাদের মধ্যে সবথেকে উজ্জ্বল। আরাপাহোরা সেটাকে বলে পাঁজর-ভাঙ্গা তারা, আর পাথরটাকে বলে ভালুকের বাড়ি।

ক্রোদের একটা রূপকথা প্রায় একই রকম --- সেই বাচ্চারা খেলা করছিল -- ভালুক তাড়া করেছিল --- বাচ্চারা পাথরে উঠে পড়ে ভালুকের নাগালের বাইরে চলে যায় --- ভালুকের আঁচড়ে পাথরে দাগ হয়ে যায়, ইত্যাদি। ক্রোদের অন্য একটা রূপকথায় আছে একটা ছোট মেয়ে দলের সঙ্গে হাঁটতে গিয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল। দলের অন্যদের পায়ের দাগ দেখে রাস্তা অনুসরণ করছিল, কিন্তু দলকে ধরতে পারছিল না। একটা ভালুক দেখতে পেয়ে তাকে খেতে যায়। মেয়েটি ভয়ে দৌড়ে পালায় আর মহান শক্তির কাছে প্রার্থণা করে বাঁচানোর। তখন হঠাৎই মাটি উঁচু হয়ে তাকে ভালুকের নাগালের বাইরে নিয়ে যায়। ভালুকও রেগে পাথরে আঁচড়ে দাগ করে দেয়। ভালুক ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাবার পর মহান শক্তি মেয়েটিকে নিরাপদে দলের কাছে পৌঁছে দেন।

শায়ানদের তিনটে রূপকথা আছে ডেভিলস টাওয়ার নিয়ে। প্রথম গল্পটা এরকম। শায়ানদের একটা দল গেছিল পবিত্র মাতো তিপলিয়া, অর্থাৎ ভালুকের বাড়ি (ডেভিলস টাওয়ার), মহান শক্তির উদ্দ্যেশ্যে প্রার্থণা করতে। দলের একজন লক্ষ্য করল তার বউ মাঝে মাঝেই আস্তানা ছেড়ে বেরিয়ে চলে যায়। লোকটি এই ভেবে আশ্চর্য হল যে সে তো বউয়ের প্রতি যথেষ্ট অনুরক্ত, তাকে বুনো মোষ আর হরিণের মাংস এনে দেয় যথেষ্ট, জন্তুর চামড়াও দেয় পোশাক বানাতে। দলের অন্য কোনও পুরুষকে সন্দেহ করার নেই, কারণ ওই সময় কারুকেই উধাও হতে দেখা যায় না। তবে রহস্যটা কি? একদিন বউ ফিরতে তাকে জেরা করে লোকটি, কিন্তু সে কোনও উত্তর দেয় না। তখন রাগে লোকটি বউএর গায়ের চামড়ার জ্যাকেটটি খুলে ফেলে ও আশ্চর্য হয়ে দেখে তাতে প্রচুর নখের আঁচড়। লোকটি অত্যন্ত রাগতঃস্বরে জানতে চাইল কে তাকে এইভাবে নির্যাতন করেছে। তার উত্তরে বউটি যা জানাল, তাতে লোকটি স্তম্ভিত হয়ে গেল শুনে। একদিন ফল কুড়োতে গিয়ে একটা বিরাট ভালুকের মুখোমুখি পড়ে যায় সে। ভালুকটার কোনও সঙ্গিনী ছিল না। বউটিকে তার ভাল লেগে যায় ও তাকে সে আদর করে। ভালুকের ভয়ে সে কোনও বাধা দিতে পারে না, কারণ না হলে ভালুকে দলের সবাইকে মেরে ফেলত।
এই কথা শুনে লোকটি বলল সে ভালুকটাকে মারবে, তাকে তার কাছে নিয়ে যেতে। কিন্তু ভালুকটার বিশাল চেহারা দেখে সে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। ভালুকটা তখন তার থাবা দিয়ে বউটিকে একটা চড় মারে, আর তার ফলে বউটিও একটা ভালুকে রূপান্তরিত হয়।
এরপর লোকটি দলের কাছে ফিরে লোকজন জড়ো করে ফিরে আসে ভালুকটাকে মারবে বলে। তারা দেখতে পায় ভালুকটা একটা গুহায় ঢুকছে। তার পিছনের পা রয়েছে গুহার মুখে। কিন্তু সেটা এত বড় যে ভালুকটাকে মারার জন্য যথেষ্ট কাছে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা ভালুকটাকে বার করার জন্য তার পায়ে তির ছোঁড়ে। ভালুকটা বেরিয়ে আসে কিন্তু তার বিশাল চেহারা দেখে লোকজন ভীত হয়ে একটা পাথরে আশ্রয় নেয় ও মহান শক্তির কাছে প্রার্থণা করে তাদের বাঁচানোর জন্য। পাথর তখন অনেক উঁচু হয়ে যায়। ভালুকটা পাথরে লাফিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। মহান শক্তির সাহায্যে লোকেরা ভালুকটাকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়। ভালুকে রূপান্তরিত সেই বউটিও সেই পাথরের কাছে আস্তানা গাড়ে, তাই পাথরটা ভালুকের বাড়ি নামে পরিচিত হয়।

এর পরের রূপকথাটাও শায়ানদের। একসময় এক দম্পতি বাস করত। ঘরে চুল্লির ধোঁয়া ঢুকে যাচ্ছিল বলে বউটি চিমনি সারাতে উঠেছিল যখন ঘরের ছাউনির মাথায়, তখন তাকে এক ভালুকে ধরে নিয়ে যায়। তার বর সেইজন্য খুব কাঁদছিল। সেই লোকটির ছিল আরো ছয় ভাই। তার মধ্যে সবচেয়ে ছোটজন বলল, একটা ধনুক আর চারটে তির বানিয়ে দিতে। তিরগুলোর দুটো ঈগলের পালকের হবে ও লাল রঙ করা হবে, আর বাকি দুটো হবে বাজপাখির পালকের যাতে কালো রঙ করা হবে। আর সে বলল তিরগুলোর মুখ ভোঁতা রাখতে। সেগুলো তৈরি হলে সাতভাই মিলে বউটিকে উদ্ধার করতে বের হল। ছোটভাই ওই চারটেই তির নিল; বাকিরা যত পারে নিল।
ছোটভাই প্রকৃতপক্ষে যাদু জানত। ভালুকের গুহায় পৌঁছে সে বাকিদের অপেক্ষা করতে বলে নিজেই গুহায় ঢুকল একটা মেঠো ইঁদুর হয়ে গর্ত খুঁড়ে। ঠিক ততটাই চওড়া করল গর্ত যাতে বউটিকে বের করে আনতে পারে। সেই ভালুকটা তখন বউটির কোলে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছিল। ইঁদুর সাজা ছোটভাইটি তখন যাদু করে আর সব ভালুকদের ঘুম পাড়িয়ে দিল। তারপর মানুষের রূপে ফিরে বউটিকে ফিরে যাবার জন্য বলল। কম্বল দিয়ে একটা বালিশ বানিয়ে ভালুকটার মাথাটা শুয়ে দেওয়া হল যাতে সে কিচ্ছু টের না পায়। এরপর হামাগুড়ি দিয়ে তারা গুহা থেকে বেরিয়ে এল। সাথে সাথেই গর্তটা বুঁজে গেল। বেরিয়ে এসে বউটি সাতভাইকে বলল শিগগিরি পালাতে কারণ এই ভালুকটাকে মারা অসম্ভব। সবাই পালানোর পরে ভালুকটা ঘুম ভেঙ্গে গুহার বাইরে এসে দেখতে পেল বউটি পালিয়েছে। তবে সবার পায়ের দাগ অনুসরণ করে ওরা যেখানে আস্তানা গেড়েছিল, যেটা এখন ভালুকের বাড়ি বলে পরিচিত, সেই ডেভিলস টাওয়ারের জায়গায় এসে পৌঁছায়। সঙ্গে আরও অনেক ভালুকের দলবল নিয়ে। তখনও অবশ্য পাথর এরকম উঁচু হয় নি। ভালুকের দলবলকে আসতে দেখে ছোট ভাইটি একটা ছোট পাথর হাতে নিয়ে বাকিদের চোখ বুঁজতে বলে। তারপর সে একটা গান গায়। গান শেষ হলে বাকিদের চোখ খুলতে বলে। সবাই দেখে পাথরটা বিরাট বড় হয়ে গেছে। এরকম চারবার করাতে পাথরটা এখনকার মতো বড় হয়েছে।
ভালুকটা তার দলবল নিয়ে পাথরের নিচে থেকে বউটিকে দাবী করে। লোকেরা তার উত্তরে তির ছোঁড়ে। তাতে ভালুকের সাঙ্গপাঙ্গরা সব মারা পড়ে, তবে বড় ভালুকটার কিছু হয় না। ভালুকটা গর্জন করে লাফ দিয়ে পাথরের উপর উঠতে যায়, কিন্তু পৌঁছাতে পারে না। ছোটভাই তার দিকে একটা কালো তির ছোঁড়ে, কিন্তু ভালুকটার তাতে কিছু হয় না। সে দৌড়ে এসে লাফ দিলে পাথরে দাগ হয়, যা আমরা এখন দেখতে পাই। চারবারের চেষ্টায় ভালুক যখন পাথরে প্রায় উঠে এসেছে, তখন ছোটভাই তার শেষ তিরটা ছোঁড়ে, যা ভালুকটার মাথা দিয়ে ঢুকে চোয়াল দিয়ে বেরিয়ে যায়, আর ভালুকটা মারা পড়ে। তারপর ছোটভাই ন্যাড়া ঈগলের (Bald Eagle) ডাকের মতো আওয়াজ করে। তাতে চারটে ঈগল এসে পড়ে। ওদের পা ধরে ধরে সবাই পাহাড় থেকে নেমে পড়ে। ছোটভাইয়ের কথামত কাঠ জ্বেলে চিতার আগুনে ভালুকটাকে পোড়ানো হয়। সে সবাইকে সাবধান করে দেয়, আগুন থেকে ছিটকে আসা ভালুকের দেহের টুকরোগুলো কেউ যেন হাত দিয়ে না তোলে; শুধু লাঠি দিয়ে তুলে চিতার আগুনে আবার দিয়ে দেয়। না হলে ভালুকটা আবার বেঁচে উঠবে।
এরপর ভাইয়েরা মিলে আসেপাশে যত ভালুক ছিল, তাদের সবাইকে মেরে দেয়, শুধু দুটোকে বাঁচিয়ে রাখে। সেই দুজনকে বলে দিল আর কখনও মানুষকে বিরক্ত না করতে। তারপর তাদের কান আর লেজ কেটে ছেড়ে দিল। সেই থেকে ভালুকদের কান আর লেজ ছোট।

শায়ানদের অন্য একটা গল্প এরকম। এক সাহসী লোকের দুটো মেয়ে ছিল। ওরা ব্ল্যাক হিলে শিকার ধরে বেড়াত। একদিন শালগম কুড়োতে গিয়ে গিয়ে বড় মেয়ে একটা বিরাট ভালুকের সামনে পড়ে। ভালুকটা ভারি ভালো ছিল, তাই মেয়েটিরও তাকে খুব ভালো লাগত। এই কথা শুনে ছোট মেয়েটিরও খুব কৌতুহল হল ও সে দিদির সাথে যেতে চাইল। কিন্তু ভালুকটা যখন দেখল যে বড় বোনটি একা আসে নি, তখন সে খুব রেগে গেল আর ছোট বোনটিকে খেয়ে নেবে বলল। বড় বোন তখন অনেক বুঝিয়ে তাকে নিবৃত্ত করে। ভালুক ছোট বোনকে একটা কামড় দিয়ে ছেড়ে দেয়, আর বলে কারুকে না জানাতে --- নইলে সে সবাইকে খেয়ে নেবে।
ছোট মেয়েটি ফিরে গিয়ে কথাটা চেপে রেখেছিল প্রথমে, কিন্তু তার কাঁধে গভীর ক্ষত দেখে তার বাবা জিজ্ঞাসা করলে সে পুরো ঘটনাটা বলে ফেলে।
খবরটা ছড়িয়ে পড়তে লোকে ভয় পেয়ে পশ্চিমদিকে পালায়। পালাতে পালাতে তারা একসময় এসে পড়ে এক আশ্চর্য পাথরের সামনে। পুব দিক দিয়ে ধেয়ে আসা ভালুকের দলকে তারা দেখতে পায়। পাথরের কাছে এসে বড় মেয়েটি একটা পাথরের ছুরি দিয়ে পাথরের গায়ে অনেক গর্ত করে পা রাখার জন্য। ্সেই গর্তগুলো ব্যবহার করে লোকজনেরা সবাই পাথরের উপর চড়ল। ভালুকটা আর লোকগুলোকে ধরতে পারল না। তার আঁচড়ে পাথরের গায়ে তৈরি হয়। আর সেই থেকে পাথরটার নাম হয়ে যায় ভালুকের মিনার।

সিউদের এরকম দুটো রূপকথা আছে। প্রথম গল্পটাতে আছে, অনেকদিন আগে এক সাহসী লোক ছিল, যে ঘাসজমিতে একা একা গিয়ে মহান শক্তির উপাসনা করত। সঙ্গে নিয়ে যেত তার বুনোমোষের একটা খুলি। একদিন সে হঠাৎ খেয়াল করল যে সে একটা উঁচু পাথরের উপর রয়েছে। কি করে নামবে বুঝতে না পেরে সে মহান শক্তির স্তব করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙ্গলে দেখে যে সে আবার নিচে ফিরে এসেছে, আর চারিদিকে ভালুকের পায়ের ছাপ। পাথরের গায়ে ভালুকের আঁচড়ের দাগ। বোঝাই গেল যে ভালুকটা প্রকান্ড আর সে ভালুকের বাসস্থানের ঠিক উপরে ছিল। মহান শক্তি তাকে ভালুকের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।  সেই থেকে ওই পাথরের নাম হয় 'মাতো তিপলিয়া' আর সেটা একটা পবিত্র স্থান বলে পরিচিত হয়। সেই বুনো মোষের খুলিটা পাথরের উপর এখনও আছে।

সিউদের অন্য গল্পটাতে আবার ভালুক উপকারী হিসেবে দেখা দেয়। মাতো তিপলিয়ায় একদল সিউ আস্তানা গেড়েছিল। কাছাকাছি ক্রোদের একটা দল সেখানে এসে পড়লে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সিউ আর ক্রোরা ছিল জাতশত্রু। সিউদের তির শেষ হয়ে যায়। এমন সময় একটা বিরাট ভালুক এসে সিউদের বলে, চিন্তা নেই, সেই ক্রোদের সঙ্গে লড়বে। ভালুকটা ছিল দৈবশক্তিসম্পন্ন। ক্রোদের তিরে তার কিছুই হল না। বরঞ্চ তাদের ছোড়া তির সে সিউদের দিয়ে দিতে লাগল। এর ফলে ক্রোরা সিউদের আর মারতে পারল না। সূর্য ডুবে গেলে ক্রোরা লড়াই ছেড়ে ফিরে চলে যায়।

লালমানুষদের বিশ্বাস ডেভিলস টাওয়ারের ঠিক তলায় একটা আশ্চর্য বিশুদ্ধ জলের হ্রদ আছে, আর সেখানে আছে প্রচুর সোনা। সেখানে যাবার একটা সুড়ঙ্গপথও আছে। কথায় আছে একবার তিনজন লালমানুষ ডেভিলস টাওয়ারের কাছে শিকার ধরতে গিয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে তারা পাথরের নিচে একটা সুড়ং খুঁজে পায়। মশাল জ্বালিয়ে তারা আধমাইল মতো রাস্তাও যায়। ওখানে প্রচুর পরিমানে সোনাও ছিল। কিন্তু সেখানে তারা অনেক মানুষের হাড় দেখতে পায়। তারা বুঝতে পারে সোনা খুঁজতে এসে সেই মানুষগুলো সব মারা পড়েছে। তারা তখন ভয় পেয়ে ফিরে আসে ও সুড়ঙ্গের পথ বন্ধ করে দেয়। পরে আবার কখনও ফিরে আসবে মনে করেছিল, কিন্তু আর কখনও ফিরতে পারে নি। মৃত্যুর সময় শুধু তারা বলে গেছিল, সেই থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম সুড়ঙ্গের গল্প চলে আসছে, কিন্তু আর কেউ তা খুঁজে পায় নি।


পুনশ্চঃ (ডেভিলস টাওয়ারের আধুনিক ইতিহাস)

ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকেরা আমেরিকায় আসতে শুরু করার অনেক পরেও এই এলাকা শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত হয় নি। ফরাসীরা আমেরিকার মাঝের এই অংশের দাবিদার ছিল, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই বিশাল দুর্গম অঞ্চলের খুব কম অংশই তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৮০৩ সালে আর্থিক অনটনে ক্লিষ্ট ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ন তাদের অংশ সদ্য গঠিত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিক্রী করে দেন, যা ইতিহাসে লুইজিয়ানা ক্রয় (Lousiana Purchase) বলে বিখ্যাত। এর ফলে নবীন এই রাষ্ট্রের আয়তন দ্বিগুণ হয়ে যায়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসনের উদ্যোগে লুইস আর ক্লার্ক পশ্চিম অংশে অভিযান করলে আমেরিকানরা এই বিশাল অঞ্চল সম্বন্ধে জানতে শুরু করে। ১৮৫০ সাল নাগাদ সাধারণ নাগরিকেরা আসতে শুরু করে। প্রথমে ফারের ব্যবসার প্রয়োজনে, যে ফার দিয়ে শীতের পোষাক তৈরি হত তখন। তখন থেকে নেটিভেরা হঠতে শুরু করে। ১৮৭৫ সালে নিউটন-জেনি অভিযানে প্রথম ডেভিলস টাওয়ারের ছবি তোলা হয়। এর পর ১৮৬২ সালে পাশ হওয়া হোমস্টেড আইনের (Homestead Act) দৌলতে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা পাকাপাকি বসবাসের জন্য জমি পাবার অধিকারী হয়। এই আইন অনুযায়ী যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিক, যে কখনও আমেরিকার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে নি, ১৬০ একর সরকারি জরিপ করা জমির মালিকানা দাবি করতে পারে বসবাস আর চাষ করার উদ্দ্যেশ্যে। ভিড় বাড়তে থাকে। আমেরিকার সরকার টাওয়ারের গুরুত্ব বুঝে ১৮৯০ সালে এলাকায় ব্যক্তিগত সম্পত্তির কেনাবেচা নিষিদ্ধ করে দেয়। ১৯০৬ সালে প্রকৃতিপ্রেমিক ও সংরক্ষক মার্কিন রাষ্ট্রপতি থিওডোর রুজভেল্টের উদ্যোগে ডেভিলস টাওয়ার জাতীয় স্তম্ভের (National Monument) মর্যাদা পায়।

১৮৭৫ সালে ভূতাত্বিক অভিযানের সময় কর্ণেল রিচার্ড ডজ 'ডেভিলস টাওয়ার' নামকরণ করেন। কেন এই নাম, তা ঠিক পরিষ্কার নয়। কর্ণেলের বক্তব্য ছিল নেটিভ উপজাতিদের কেউ কেউ একে অপদেবতার মিনার বলত, সেই সূত্রেই তাঁর এই নামকরণ করা, তবে এ কথার সমর্থনে কোনও তথ্য মেলেনি। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই নামটাই চালু হয়ে যায়। ডজের তথ্যের ভিত্তিতেই ১৮৭৯ সালে ওয়াইওমিং সরকার ডেভিলস টাওয়ারের প্রথম সরকারি মানচিত্র বানায়।

ডেভিলস টাওয়ারে ওঠা যায় রক ক্লাইম্বিং করে। এমনকি প্যারাস্যুটে করে টাওয়ারের মাথায় নেমে ছয় দিন আটকে থেকে শেষমেষ উদ্ধার হওয়ার ঘটনাও আছে। নেটিভরা অবশ্য খুবই অখুশি তাদের এই পবিত্র পাথরে এইভাবে ওঠাতে আর পাথরে গজালের ফুটো করাতে।


তথ্যসূত্রঃ

Display boards at Devils Tower National Monument
Indian Legends of Devils Tower
"The West", a documentary film by Ken Burns


------------
প্রথম প্রকাশ, ফেসবুক, সেপ্টেম্বর ২০১৯
কপিরাইটঃ শুভাশিস ঘোষাল